দেবীদ্বার (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
কুমিল্লার দেবীদ্বারে গোমতী নদীর উপরে নির্মিত খলিলপুর সেতুটির রেলিং না থাকার কারনে সেটি পারাপারে ঝুঁকি বাড়ছে পথচারী ও যানবাহনের। স্কুল ও মাদ্রাসাগামী শিশু শিক্ষার্থীদের নিয়ে চিন্তিত শিক্ষক ও অভিভাবক মহল। সরেজমিনে খলিলপুর সেতুটি পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, মাত্র ১৭ বছর আগে নির্মিত সেতুটির মাঝ বরাবর অধিকাংশ স্থান জুড়ে দুই পাশের রেলিং কোথাও আংশিক,কোথাও সম্পূর্ণ উধাও। রেলিং বিহীন ব্রিজের ফুটপাথ ধরে পারাপার হচ্ছে প্রাথমিক স্তরের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। তাদের পাশ কাটিয়ে দ্রুত ছুটে যাচ্ছে অটো, সিএনজি আর মালবাহি পিক আপভ্যান। শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে বুঝা গেল রেলিং না থাকার ঝুঁকি নিয়েই তারা প্রতিদিন সেতু পাড় হয়। সেতু থেকে পড়ে যাবার ভীতির কারনে অনেকেই স্কুলে বা মাদ্রাসায় একা আসতে চায় না। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায় ২০০৫ সালে জোট সরকারের আমলে এ সেতুটি নির্মাণ হয়। নির্মাণ কালে ত্রুটিপূর্ন সেন্টারিংয়ের কারণে ১৩০মিটার লম্বা সেতুটির মাঝের অংশ তখনই সামান্য দেবে যায়। সেই অবস্থায়ই ঠিকাদার নির্মাণ শেষ করে সেতুটি হস্তান্তর করে বিল উত্তোলন করে নিয়ে যায়। বিগত সাত আট বছর যাবত রেলিংয়ের পলেস্তারা খসে পড়তে থাকে। বিগত ১৭ বছরে সেতুটির কোনো সংস্কার না হওয়ায় ধীরে ধীরে প্রায় অর্ধেক রেলিংই খসে পড়ে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকানী জানান,পলেস্তারা খসে পড়ার কারনে সহজেই খুলে নেয়ার সুবিধা থাকায় স্থানীয় কিছ মাদকসেবী রাতের আধারে রেলিং খুলে নিয়ে রডগুলি ভাংগারীর দোকানে বিক্রয় করে দেয়। গ্রামবাসী জানায়, তারা স্থানীয় এলজিইডি অফিসকে অবহিত করেছেন, কিন্তু কার্য্যত কোনো ফল হচ্ছেনা। এখন এই সেতুটির উপর দিয়ে চলাচল করতে তাদের ভয় হয়। তারপর ও উপায় না পেয়ে ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছেন।
খলিলপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর আলম মুন্সী জানান,দুইটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুল,একটি হাইস্কুল,দুইটি মাদ্রাসা ও একটি কলেজসহ ৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় শিক্ষার্থীরা নিয়মিত সেতুটি পারাপার হয়। প্রাথমিক পর্যায়ের বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য সেতুটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। রেলিং না থাকায় অভিভাবকরা সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পান।
৬ নং ফতেহাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কেএম কামরুজ্জামান মাসুদ জানান,দেবীদ্বার উপজেলার সাথে পার্শ¦বর্তি বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার কিছু এলাকার সড়ক যোগাযোগের মাধ্যম এই সেতুটি। বালিবাড়ি, হামলাবাড়ি,বারেরারচর, খলিলপুর,আশানপুর,জয়পুর, কামারচর, হেতিমপুর, নূরপুর, বড়কান্দা ও বুড়িরপাড় সহ প্রায় পঁচিশটি গ্রামের অর্ধ লক্ষ মানুষ ঝুঁকি নিয়ে সেতুটি নিয়মিত ব্যবহার করেন। অত্র এলাকার গুরুত্বপূর্ণ এ সেতুটির রেলিং নির্মাণ ও সংস্কার অত্যন্ত জরুরী কিন্তু এলজিইডি অফিস কি কারনে সেতুটি সংস্কারে গড়িমসি করছেন, তা বোধগম্য নয়।
এ বিষয়ে দেবিদ্বার উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মো. শাহালম জানান, খলিলপুর সেতুটি সংস্কারের বিষয়ে প্রস্তাবনা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। চলতি সপ্তায় সেতুটির সার্বিক অবস্থা নিয়ে পর্যালোচনার জন্য আমরা জরুরী বৈঠকে বসব এবং প্রয়োজনে আবারো প্রস্তাবনা পাঠাবো। আশা করি খুব শিগগিরই এর কাজ শুরু করতে পারবো।