কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার ধামতী গ্রামের ‘নলুয়া খেলার মাঠ’ এখন স্থানীয় এক প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের দখলে রয়েছে। উপজেলার সবচেয়ে বড় এ খেলার মাঠটির আয়তন ৫ একরের বেশি। তবে দখলদাররা চারপাশ থেকে ঘিরে ধরেছে মাঠটিকে।
বিশাল এ খেলার মাঠটিতে প্রতিদিন আশপাশের এলাকার ছোটবড় শিশু, কিশোর ও যুবকরা ফুটবল ও ক্রিকেট খেলায় ব্যস্ত সময় পার করেন। বছরের কয়েক মাস মাঠে খেলাধুলা করার সুযোগ পান স্থানীয় শিশু-কিশোররা। অধিকাংশ সময়ই মাঠটি এলাকার প্রভাবশালীদের দখলে থাকে। তারা সেখানে মাছ চাষ করেন। স্থানীয় বাসিন্দা মো. আকাশ সরকার জানান, আয়তনে শুধু দেবীদ্বারই নয়, এ মাঠটি বাংলাদেশের হাতেগোনা কয়েকটি মাঠের মধ্যে একটি। মাঠের পূর্বপাশে সরকারি সড়ক। দক্ষিণ পাশে আবুল হাসেমের ছেলে শরিফ ভূঁইয়া ও জামাল ভূঁইয়া পুকুর খনন করে মাছ চাষ করে আসছেন। অপরদিকে মাঠের অংশ ও পুকুরের অংশ থেকে মাটি কেটে লক্ষ লক্ষ টাকায় বিক্রি করেন মিজান চৌধুরী। আরেক বাসিন্দা তুহিন সরকার জানান, মাঠটিতে উপজেলা প্রশাসন গুচ্ছ গ্রামের প্রকল্প হিসেবে নিতে চাইলে আমাদের বাঁধার মুখে তা সম্ভব হয়নি।
স্থানীয়রা আরো জানান, জেলা প্রশাসক থেকে স্থানীয়রা মাঠের ৩১ শতাংশ জমি ৯৯ বছরের জন্য ইজারা নিয়ে মসজিদ নির্মাণ করেন। উত্তর পাশের একাংশে ‘সুয়া মিয়া মাজার’ এবং ‘ঈদগাহের’ পাশের ১.৬৬ শতক জমি ইজারা নিয়ে ওই পুকুরকে আরো ব্যাপকভাবে প্রসারিত করে এবং মাটি বিক্রি করে আসছেন ইজারা গ্রহিতারা। স্থানীয় সুমন মিয়া জানান, অনেক বছর আগে একটি ফুটবল টুর্নামেন্ট খেলা নিয়ে দুই গ্রুপের মারামারি হয়। সেই ঘটনায় মামলা হলে ধামতীর ঐতিহ্যবাহী নলুয়া খেলার মাঠে আর কোনো টুর্নামেন্ট গড়ায়নি। তবে বিকেল হলে এলাকার শিশু, কিশোর ও যুবকেরা ফুটবল ও ক্রিকেট খেলেন। তবে এ চিত্র মাত্র বছরের কয়েক মাস দেখা যায়। বাকিটা সময় মাঠটিতে স্থানীয় প্রভাবশালী শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া মাছ চাষ করে থাকেন। এ বিষয়ে শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘মাঠ ও পুকুরটি তিনি নলুয়া মসজিদ ও সুয়া মিয়ার শাহের মাজার কমিটি থেকে ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে দুই বছরের জন্য ইজারা নিয়েছেন।’ মাঠ থেকে মাটি কেটে নেওয়ার বিষয়ে মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘গত বছরে দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সময় তিনি স্থানীয়দের দাবির মুখে মাঠের সাথে রাস্তা মেরামত করে দেন মাঠের মাটি দিয়ে।’ কিন্তু মাঠ থেকে অন্যত্র মাটি কেটে বিক্রি করার অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন। ধামতী ইউনিয়ন উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মো. মহসিন মিয়া জানান, ধামতী ইউনিয়নে ১ নং খাস খতিয়ানভূক্ত জমি আছে ১০১ একর ৯৫ শতক। আর অর্পিত সম্পত্তি আছে ৪৫ একর ২৩ শতক। কিছু জমি ইজারা নিয়ে দখলে আছে। আর মাঠ ও মাঠের পাশের জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে।
দেবীদ্বার উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রায়হানুল ইসলাম বলেন, ‘মাঠ ও মাঠের সাথে পুকুরটি মূলত মাঠেরই অংশ। পুরো সম্পত্তিটি সরকারি জায়গা।’
তিনি আরো জানান, মাঠ ও পুকুরটি অবৈধ দখলের বিষয়ে তিনি কোনো অভিযোগ বা অবগত নন। অবৈধ দখলের বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দেন তিনি।